Thursday, October 30, 2025
Google search engine
Homeঅপরাধরূপগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসে চলে এসিল্যান্ডের নিজস্ব আইন, সীমাহীন দূর্ণীতির অভিযোগ

রূপগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসে চলে এসিল্যান্ডের নিজস্ব আইন, সীমাহীন দূর্ণীতির অভিযোগ

রূপগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসে  চলে এসিল্যান্ডের নিজস্ব আইন,সীমাহীন দূর্ণীতির অভিযোগ 


রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ- নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসে উৎকোচের টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয়না বলে অভিযোগ উঠেছে । 

প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা গ্রহীতারা। নামজারী, মিস কেসের নামে চলছে সীমাহীন দূর্ণীতি আর ঘুষ বানিজ্য। এ অফিসে সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে এসিল্যান্ডের নিজস্ব আইন। উপজেলা ভুমি অফিসে অনিয়ম,স্বেচ্ছাচারিতা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে অনেক ক্ষেত্রে উৎকোচ দেওয়ার পরও কাজ হয়না। 

ভূমি মালিকরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে,ভূমি অফিসের উৎকোচ দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে পাওয়া যাচ্ছে না ভূমি অফিসের কাঙ্খিত সেবা। নামজারি  ও মিস কেসের নামে চলছে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য। 

রূপগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ভুমি অফিস রয়েছে। অফিগুলোতে খোঁজ নিলে বেড়িয়ে আসবে ঘুষ,দুর্ণীতি আর অনিয়মের চিত্র। নামজারীর আবেদন থেকে শুরু করে নামজারীর প্রস্তাব, সার্ভেয়ার রিপোর্ট,নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ  করে নামজারী সম্পন্ন করাসহ সব কিছুতেই ঘুষ আর ঘুষ।  জানা যায়,এসিল্যান্ডের ঘুষের সাংকেতিক চিহ্ন হচ্ছে (এল আর)। 

সরকারি  হিসাবে ৩৩ শতাংশে এক বিঘা। রূপগঞ্জ ভুমি অফিসে চলে  এসিল্যান্ডের বেঁধে দেওয়া আইন। এখানে ২৫ শতাংশে এক  বিঘা, ৪০ শতাংশে ২ বিঘা, ৬০ শতাংশে তিন বিঘা, ৮০  শতাংশে ৪ বিঘা ও ১০০ শতাংশে ৫ বিঘা হারে এসিল্যান্ড তার  ঘুষের অংক বসান। সেই হারে ঘুষের টাকা দিলে নামজারী হয়। আর টাকা না দিতে পারলে নামজারী ফাইল পরে থাকে মাসরে পর  মাস।মিস কেসের ক্ষেত্রে মিলেছে ভিন্ন রকম তথ্য, কেউ মিস কেছ  করে ৪/৫ বছর ধরে ধরনা দিচ্ছেন এসিল্যান্ড অফিসে। কিন্তু কোন  সুরহা পাচ্ছেন না।  

এ ব্যপারে ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ২০১৬  সাল থেকে মিস কেছ নিয়ে ভুমি অফিসে ঘুরতেছি। আমার  কেসের কোন রায় দিচ্ছেনা। কারন হিসাকে জানতে চাইলে  বলেন, আমার কাছে ১ লক্ষ টাকা দাবী করে। আমি টাকা দিতে  পারিনি তাই আমার কেসের রায় হয়না।  ইছাখালী এলাকার বৃদ্ধা খাদিজাবেগম (৭০) অভিযোগ করে  বলেন, ২০০৬ সালে পূবগাও মৌজায় তার নামে ৬ শতাংশ জমি  তিনি নামজারী করেন। ২০১৮ইং সালে বিনা নোটিসে তার  নামজারী কর্তন করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।  উপজেলা ভুমি অফিসের প্রধান ফটক দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই  নামজারী সম্পর্কিত তথ্যবহুল বড় বড় ব্যানার বা লিফলেট চোখে  ভেসে উঠবে । সেখানে লিখা রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সেবা  দেয়ার কথা। লিফলেটে লেখা রয়েছে আবেদনের জন্য কোর্ট ফি  ২০ টাকা, নোটিস জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা  হালকরন ফি ১০০০ টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান ফি ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে ১১৭০ টাকা। কিন্তু ব্যানার বা  লিফলেটে দেয়া নির্দেশাবলী ব্যানার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে।  খেঁাজ নিয়ে মিলেছে ভিন্ন রকম তথ্য। প্রতিটি  ডিসিআরের জন্য নেয়া হচ্ছে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৭শ’  থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অভিযুক্ত কর্মকর্তা প্রতি  পর্চা ও ডিসিআর স্বাক্ষর করতে ২শ’ টাকা নিয়ে থাকেন । ভুমি অফিসের এক ঘনিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, জেনারেল  খারিজের ক্ষেত্রে এখানে ২৫ শতাংশে বিঘা হিসাবে নামজারী  করতে এসিল্যান্ড নেন ২ হাজার টাকা এলআর নামক ঘুষ। তাহলে  ১শ’ শতাংশে এসিল্যান্ড আতিকুল ইসলাম নিচ্ছেন ১০ হাজার  টাকা। প্রতি বছর রূপগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসে নামজারী  আবেদন হয় প্রায় ২৫ হাজার। সেখান থেকে নামজারীঅনুমোদন হয় প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার। এর মধ্যে সাধারণ  হিসাবে অভিযুক্ত এসিল্যান্ড হাতিয়ে নিচ্ছেন ২ থেকে আড়াই  কোটি টাকা। পূর্বাচল প্লটের এলআর হচ্ছে কাঠা ভিত্তিক। ৩  কাঠার প্লট অনুমোদন দিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা নিচ্ছেন  সাড়ে ৩ হাজার, ৫ কাঠা নিচ্ছেন সাড়ে ৪ হাজার, ৭ কাঠা  নিচ্ছেন ৬ হাজার ও ১০ কাঠার প্লট নিচ্ছেন সাড়ে ৭ হাজার  টাকা। প্রতি বছর প্লটের নামজারী অনুমোদন হয় প্রায় ৪  থেকে ৫ হাজার। পূর্বাচল উপশহরের প্লটের নামজারী করে  এসিল্যান্ড নিচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি টাকা।  ‘খ’ তফসিল জমির ক্ষেত্রে সরকার ২০১৩ সালে এক প্রজ্ঞাপনে  অবমুক্তির একটি আদেশ দেন। সেই ‘খ’ তফসিল জমি ১ থেকে  ১০ শতাংশ পর্যন্ত খারিজ করতে এসিল্যান্ড ঘুষ নেন ২৫ থেকে ৪০  হাজার টাকা, ১ থেকে ১৫ শতাংশ খারিজ করতে নেন ৩৫ থেকে  ৫০ হাজার টাকা, ১ থেকে ৩০ শতাংশ নেন ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার  টাকা, ১ থেকে ৫০ শতাংশ নেন ৭৫ থেকে ১ লাখ টাকা, ১ থেকে  ৭৫ শতাংশ নেন ১ থেকে দেড় লাখ টাকা ও ১ থেকে ১শ’ শতাংশ  নেন দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। কাগজপত্রের একটু গড়মিল হলে এক  বিঘা খারিজ করতেই নেন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। পার্ট ভিপি  নামজারীর ক্ষেত্রে একই হারে ঘুষ নেন এসিল্যান্ড আতিকুল  ইসলাম। সে হিসাবে খ তফসিল আর মিস কেস থেকে হাতিয়ে  নিচ্ছেন ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা। এ ঘুষের টাকা তিনি তার অধিনস্থ কর্মচারীদের মাধ্যমে আদায়  করে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী জানান, আমরা স্যারের অধীনে কাজ করি। স্যারের নির্দেশ আমাদের পালন  করতে হয়। স্যারের নির্দেশ পালন না করে কি অফিসে কাজ করতে  পারবো? দাউদপুর ইউনিয়নের কাইয়ূমবঙ্গবাসী, তায়েব আলী মোল্লা,  মোতাহার হোসেন ও মামুন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জমির  মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দাউদপুর ইউনিয়নের  কুলিয়াদী, দেবগ্রাম, হিরনাল, লক্ষাশিমুলিয়া, শিমুলতলা,  রঘুরামপুর মৌজার নামজারী এসিল্যান্ড তার নিজস্ব ক্ষমতাবলেবন্ধ রেখেছেন। পুরো উপজেলায় চাউর উঠেছে ৬ মৌজার খারিজ  বন্ধ। কিন্তু না, ঘুষখোর কর্মকর্তার সাথে রফাদফা হলে শতাংশ  প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে খারিজ করে দেন।  দাউদপুর এলাবাসীর অভিযোগ করে বলেন আমরা আমাদের বাব  দাদার ভিটে বাড়ি খারিজ করতে পারিনা। এসিল্যান্ড কোন  ক্ষমতার বলে খারিজ বন্ধ রেখেছে আমরা এ প্রতিকার চাই।  এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই। 

এ বিষয়ে দাউদপুর ইউনিয়ন উপ—সহকারী কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসিল্যান্ড  স্যারের নির্দেশ তাই এই ছয়টি মৌজার প্রস্তাব দেওয়া বন্ধ। 

রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নামজারি করতে সরকারি ফি এক হাজার ১৭০ টাকার বেশি নেয়া হয় না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দাউদপুর ইউনিয়নের কোনো মৌজায় নামজারি বন্ধ করা হয়নি। কাগজপত্র সঠিক থাকলে নামজারি হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ছয় মৌজায় নামজারি বন্ধ রাখা সম্পূর্ণ বে-আইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments