Thursday, July 31, 2025
Google search engine
Homedhakaসোনারগাঁয়ে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব, আগ্রহ বেশী মৃৎশিল্পের খেলনা-পুতুল স্টলে

সোনারগাঁয়ে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব, আগ্রহ বেশী মৃৎশিল্পের খেলনা-পুতুল স্টলে


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলছে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। মাসব্যাপী আয়োজিত এ মেলায় শোভা বাড়াচ্ছে মৃৎশিল্পের খেলনা-পুতুল। মাটির নান্দনিক কারুকার্য ও বাহারি নকশার মাধ্যমে রং তুলির আচড়ে মৃৎশিল্পিরা খেলনা-পুতুলগুলো ফুটিয়ে তুলছেন আকর্ষনীয় ভাবে। এসব দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন নানান বয়সি মানুষ।

লোককারুশিল্প ফাউন্ডেশনের মেলা চত্বরে কারু পল্লীর গ্যালারীর সামনে গেলেই চোখে পড়ে মৃৎশিল্পের স্টল। সেখানে দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে মাটির তৈরী হাতি, ঘোড়া, পাখি, গরু, ঘর, খাট, নৌকা, পুতুল ইত্যাদি ইত্যাদি খেলনা ও ঘর সাজানোর শো-পিছ। লোকজ উৎসবে প্রদর্শীত কারু পল্লীর গ্যালারীতে স্থান পাওয়া কিশোরগঞ্জের মৃৎশিল্পের স্টলের কর্ণধার হরিদাস পাল ও তার ছেলে খোকন পাল জানান, পূর্বপুরুষের পেশা হিসেবেই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত তারা। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মাটির বাসন-কোসন, সরা, সুরাই, হাঁড়ি-পাতিল, পেয়ালা, মটকা, পিঠা তৈরির ছাঁচ ইত্যাদি তৈরি করে আসছেন দীর্ঘকাল যাবত। এই শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো পরিষ্কার এঁটেল মাটি। বাড়ির মহিলারা তাদের কাজে সহযোগিতা করেন। তবে কালের বিবর্তনে চিনা মাটি ও প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে এবং খরচ বেশি, বেচা বিক্রিও তেমন নেই বিধায় দেশীয় এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। কাজের সেই জৌলুস ও ব্যস্ততা এখন আর নেই। বাঁচার তাগিদে অনেকেই বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ ধরে রাখলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তারাও জর্জরিত। কুমারদের সহযোগিতা করার কেউ নেই।

বর্তমানে উৎসব পার্বনে মাটির তৈরী শখের হাড়ি, খেলনা-হাতি, ঘোড়াসহ নানান পুতুল, বাহারি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। শখের হাড়ি, পুতুল তৈরীর জন্য চৈত্রের শুরুতে কাজের খুব ব্যস্ততা থাকে। বাকি সময় কাটে টিলেঢালাভাবেই। মাসব্যাপী এই লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে তারা অংশ নিচ্ছেন ৫ বছর যাবত।

জানালেন, বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি ভালো। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্র ও শনিবার বিক্রি ভালো হয়। বর্তমানে মাটির বাসন-কোসন, সরা, হাঁড়ি-পাতিলের চেয়ে পুতুল বিক্রি হয় বেশী। মেলায় গড়ে প্রতিদিন তার ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকার সামগ্রী বিক্রি হয়।

মৃৎশিল্পের স্টলে আসা শিল্পী ফারজানা আহসান জয়া জানান, আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। শুধুমাত্র শিল্প নয় আবহমান গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যও এটি। নান্দনিক কারুকার্য ও বাহারি নকশায় কুমাররা দক্ষ হাতে ফুটিয়ে তোলেন তাদের শিল্পকর্ম। পরিতাপের বিষয়, আজকাল মাটির তৈরি জিনিস আগের মতো আর আমাদের চোখে পড়ে না। বলা যায়, বাঙালির ঐতিহ্য মাটির শিল্প যেন দিন দিন কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত জরুরি এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করে মৃৎশিল্প সম্পর্কে নবীন প্রজন্মকে জানানো প্রয়োজন। আর না হলে অচিরই মৃৎশিল্প স্থান লাভ করবে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments