পুলিশের নির্যাতনে তেল ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ
আজকের সংবাদ ডেস্কঃ পুলিশের এএসআই মাসুদ আলম এবং কনস্টেবলের শারিরীক নির্যাতনে এক তেল ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধিন সাদিপুর ইউনিয়নের নানাখি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
সোনারগাঁ থানার এএসআই ও কনস্টেবলের নির্যাতনে আবুল বাদশা (৪৮) নামের তেল ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ করে স্থানীয় এলাকাবাসী পঞ্চমীঘাট থেকে নয়াপুর রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
০৯ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে ওই ব্যবসায়ী চাঁদা না দেওয়ায় পুলিশের মারধরে আহত হওয়ার পর তেল ব্যাবসায়ীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে এলাকাবাসী নয়াপুর-পঞ্চমীঘাট সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে।এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যের বিচারের দাবীতে বিভিন্ন বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী।এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ৮টায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ চলছিল।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের নানাখি উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ও স্থানীয় মসজিদের সভাপতি আব্দুল বাদশা বাজারে দীর্ঘদিন ধরে সয়াবিন তেলের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকেলে সোনারগাঁ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ তার দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীক কাগজপত্র দেখার নাম করে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে আসে। তারপর আজ শুক্রবার সাদা পোশাকে ওই এএসআই কনস্টেবল তুষারকে নিয়ে পুনরায় ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিহত আব্দুল বাদশাহর ছেলে মিঠু দোকানে বসা ছিল। এসময় মিঠুর কাছে এএসআই মাসুদ ও কনস্টেবল তুষার কাগজপত্র দেখতে চান। মিঠু কাগজপত্র তার বাবার কাছে রয়েছে বলে জানান। মিঠু তার বাবাকে ফোন দিলে ব্যবসায়ী আব্দুল বাদশার আসতে দেরি হয়।পুলিশ সদস্যরা পুনরায় ওই ব্যবসায়ীর কাছে টাকা দাবী করলে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ব্যাবসায়ী আব্দুল বাদশা দোকানে আসে। পুলিশ সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসায়ী আব্দুল বাদশা ও ছেলে মিঠুকে চড় থাপ্পর ও মারধর করে। এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী আব্দুল বাদশা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই ব্যবসায়ী মারা যায়।
নিহত ব্যবসায়ী আব্দুল বাদশাহর ছেলে মিঠু জানান, একজন পুলিশ সাদা পোশাকে ও তুষার নামের একজন পোশাক পড়ে আমাদের দোকানে আসে। এসময় আমার কাছে তারা কাগজপত্র দেখতে চান। আমি কাগজপত্র বাবার কাছে রয়েছে বলে জানালে আমার কাছে টাকা চান। পরে আমি বাবাকে ফোন দিলে ওই সময়ে বাবার কাছে তারাও টাকা চাইলে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে আমাকে ও বাবাকে চড় থাপ্পর মারে। বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয় আমাদের আত্মীয় স্বজনরা।
নানাখি গ্রামের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম ও আবু সুফিয়ান জানান, সোনারগাঁ থানা পুলিশ ও তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমাদের ব্যবসা করা অতি কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। কোন কিছুর অজুহাত পেলেই আমাদের কাছে টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা না দিলেই আমাদের মারধর ও মামলার হুমকি দিয়ে থাকে। এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবী করছি।
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা জানান, আমি ঘটনা শুনে এলাকায় গিয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেছি। এলাকার লোকজনের ভাষ্যমতে, পুলিশের মারধরে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক ( এএসআই ) মাসুদ আলমের সঙ্গে ০১৭৩৭৪৩৩৪১৮ এ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নানাখি এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, এএসআই মাসুদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বাগ বিতন্ডার কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন