খুলনা অঞ্চলের সেসিপ পরিচালক শেখ হারুনুর রশীদের অন্তহীন স্বেচ্ছারিতা
আজকের সংবাদ ডেস্কঃ নাম শেখ হারুনুর রশীদ তিনি সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক। অর্থাৎ পরিচালক সেসিপ। খুলনা অঞ্চলের দুর্দান্ত কর্মকর্তা। পছন্দের তিনসহকর্মীকে সাথে নিয়ে শিক্ষা ভবনের এক কর্মকর্তার মদদে নিজের পদবির সাথে সেসিপ শব্দটি না লিখে সরাসরি পরিচালক বলে পরিচয় দিয়ে চরম স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে আসছেন।
এসব অভিযোগ তুলে অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছারিতার প্রমাণসহ একাধিকবার নালিশ করার পরও অদৃশ্য শক্তিবলে বারবারই পার পেয়ে যান বলে অভিযোগ উত্থাপনকারী ভূক্তভোগিদের অভিমত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনের এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর খুলনা অঞ্চলের পরিচালক (সেসিপ) পদে বদলির আদেশ পান প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদ। যার আইডি নম্বর ৬০৯৩। বদলির আদেশ বলে খুলনা অঞ্চলের পরিচালক সেসিপ পদে যোগদান করেন। যোদানের শুরুত্বেই তার স্বেচ্ছাচারিতার বহিপ্রকাশ ঘটতে থাকে।
তিনি পরিচালক সেসিপ হিসেবে বদলির আদেশ পেলেও খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দফতরে উপস্থিত হয়ে তিনি উপ–পরিচালকের কক্ষটি পরিচালকের কক্ষ বলে দাবি করলে অফিস জুড়েই সমালোচনা শুরু হয়। প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদ সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টরের ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক হলেও তিনি ওই প্রোগামের পরিচয়টি আড়াল করে পরিচালক সেজে শুরু করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের ওপর খবরদারি। অভিযোগ রয়েছে, সহকারী পরিচালক (সেসিপ) এনামুল হক, গবেষণা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান ও মাহফুজুর রহমান, সহকারী পরিদর্শক শুকলালকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদন্তের নামে অর্থবাণিজ্য শুরু করেন। নিজেদের সৃষ্ট মনগড়া অভিযোগ তুলে তদন্তের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি চাওর হলেও তেমন কেউই মুখ ফুটে বলতে সাহস পাননা। অথচ নিয়োম অনুযায়ী, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারোর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপন হলে শিক্ষা ভবনের নির্দেশ ছাড়া তদন্তের সুযোগ পরিচালক (সেসিপ) এর নেই। এরপরও তিনি কীভাবে তদন্ত করেছেন? জবাব মেলেনা।
তবে কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষা ভবনে কর্মরত মাধ্যমিকের এডি আমিনুল ইসলাম ওই তদন্তের নামে অর্থবাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন বলেও জোর গুঞ্জন রয়েছে। এই এডি আমিনুল ইসলাম যখন সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তখন তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি অনিয়মের ফিরিস্তি প্রকাশ পায় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। ওই আমিনুল ইসলামের আপন ভাই খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (সেসিপ) হিসেবে কর্মরত। এই সহকারী পরিচালকের সাথে পরিচালক (সেসিপ) যুক্ত হওয়ায় স্বেচ্ছাচারিতা-দুর্নীতির বহর বেড়েই চলেছে। নিজেদের মনগড়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজেরাই তদন্ত টিম গঠন করে তদন্তের নামে হয়রানী ও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েই এই চক্র খ্যান্ত হচ্ছে না, একের পর এক বিদ্যালয় জাতীয় করণের কর্মযজ্ঞ দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণের পরিদর্শন কালে ২ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি চরমভাবে চাওর হয়। গুঞ্জন ওঠে, ওই টাকা নিয়ে পরিচালক সেসিপ শেখ হারুনর রশীদ তার বাগেরহাটের রামপালে গড়ে তোলা অট্টালিকার বালি ও কাঠের দামের কিছু অংশ পরিশোধ করেছেন। অথচ পরিচালক (সেসিপ) কলেজ জাতীয়করণের ক্ষেত্রে পরিদর্শনের সুযোগ থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পরিদর্শনের সুযোগ তাকে কে দিলো? এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও জবাব মিলছে না। এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার তদন্ত শুরু হলে শিক্ষা অধিদফতরের কিছু সুযোগ সন্ধানী কর্মকর্তার নানা অপকর্মেরও চিত্র প্রকাশ পাবে। কেননা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পরিচালক পরিচালনা করবেন সেসিপ প্রকল্পভুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারিদের আয়ন/ব্যয়ন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম। তিনি তা না করে পদবির সাথে সেসিপ শব্দটি না লিখে নিজেকে শুধুমাত্র পরিচালক বলে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। একই সাথে তিনি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা একের পর এক উপেক্ষা করে যা খুশি তাই করেন। হস্তক্ষেপ তার সর্বক্ষেত্রে। কলেজের চেয়ে তিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কেই বেশি পছন্দ করেন। কারণ, সেখানে হুমকি ধামকি দিয়ে সহজেই হাতিয়ে নিতে পারেন কাড়ি কাড়ি টাকা। প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদ ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রশিক্ষণে থাইল্যান্ডে অবস্থান করলেও ওই সময়কালে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নিজের সম্মানি ভাতা তুলে নিয়ে বুঝিয়েছেন তিনি কতটা অর্থলিপ্সু। প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদ খুলনা অঞ্চলের সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি খুলনা উপ পরিচালকের কার্যালয়ের সুইপারকে অকথ্যভাষায় গালিগালজের পাশাপাশি মারপিট করেন। এ দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে তদন্তও হয়। তদন্তের নামে ওই কর্মকর্তাকেই তুষ্ঠু করা হয়। ফলশ্রুতিতে নির্যাতনের শিকার সুইপারকে বদলি হতে হয় সাতক্ষীরায়। আর এমপিওর নামে সেসিপ বিভাগের সহকারী পরিদর্শক শুকলাল সরকারের অনিয়ম যখন প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হয় তখন তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এসব অনিয়ম দুর্নীতির পাশাপাশি শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে কীভাবে টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে তার বর্ণনাও বেশ লম্বা। এছাড়া পরিদর্শন না করে খাতা কলমে পরিদশন দেখিয়ে টিএডিএ তোলার হিড়িক তো লেগেই আছে। গবেষনা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান মোটরসাইকেল চালাতে না পারলেও তার মোটরসাইকেলের তেলখরচ গুনতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে এসব অনিয়ম ও প্রকৃত পদ পদবি কৌশলে আড়াল করে নিজেকে খুলনা অঞ্চলের পরিচালক সেজে বসায় মাঠ পর্যায়ে বিভ্রান্তের সৃষ্টি হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন