ভালো কাজের সমালোচনার জবাব দিলেন সোনারগাঁয়ের ইউএনও
আজকের সংবাদ ডেস্কঃ "ভালো কাজের সমালোচনার" জবাব দিলেন সোনারগাঁয়ের ইউএনও সাইদুল ইসলাম।
গত (২৩ মার্চ)সোমবার নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলার নির্বাহী অফিসার এর অফিস কক্ষে সকলেই পিপিই পড়ার ও খোলার নিয়ম শিখে নেন এবং অফিস রুমেই কয়েকটি গ্রুপ ছবি তোলেন ও পিপিই পরিহিত ছবি ফেসবুকে পোষ্ট ও স্থানীয় সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেন সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুত শিরোনামে।
অথচ ফেসবুকে পোস্ট করা থেকে সমালোচকরা একটি গ্রুপ ছবি নেগেটিভ ভাইরাল করে,তারই প্রেক্ষিতে আজ বুধবার রাতে সোনারগাঁয়ের ইউএনও সাইদুল ইসলাম তার ফেসবুকে ভালো কাজের সমালোচনার জবাব দিলেন। ইউএনও সাইদুল ইসলামের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো----
গত ২৩ মার্চ,২০২০খ্রি. তারিখে পিপিই পরিহিত ফেসবুকে পোষ্ট করা আমার একটি গ্রুপ ছবি নেগেটিভ ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে এ পোস্টটির অবতারণা..
আমার যেসকল অতীব জ্ঞানী ভাইয়েরা নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে ইচ্ছেমত গালাগালি দিয়ে প্রশাসনকে ধোলাই করে এই ছবিটি শেয়ার করেছেন তাদেরকে বিনয়ের সাথে বলছি বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতিতে জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে প্রশাসন, পুলিশ, ডাক্তারগণকে কুটুক্তি করে হলেও জাতিকে উদ্ধারের আপনাদের এই প্রাণান্তর প্রচেষ্টা দেখে আমি সত্যিই আপ্লুত হই। আপনি ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত পরিমান হ্যান্ড স্যানিটাইজার,মাস্ক আর খাদ্য মজুদ করে কেবল হাত গুটিয়ে বসে নেই বরং নিয়মিতভাবে ফেসবুকে দেশ উদ্ধার করেই চলেছেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- ব্যক্তিগতভাবে আমি লোক্যালি কিছু ফুলস্লিপ রেইনকোর্ট কিনে ডাক্তার, নার্সসহ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যগণের জন্য পিপিই বানাতে দেই। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্কুল কলেজের বিজ্ঞান শিক্ষকদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবানুনাশক বানাবার জন্য অনুরোধ করি। স্থানীয়ভাবে ৫ হাজার মাস্ক সংগ্রহ করি যা নিয়মিত বিতরণও করছি। কথাপ্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান বার্ডফ্লু এর সময়ে দেয়া ৩০টি পিপিই উনার গোডাউনে খুঁজে পেয়েছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার এর সাথে যোগাযোগ করে ১২জন কর্মরত ডাক্তার ও নার্স এর জন্য ১৪টি পিপিই হস্তান্তর করি।
যদি কেউ করোনা ভাইরাসে মারা যায় তাহলে লাশের ব্যবস্থাপনায় কে কে যাবে এ বিষয়ে সেদিন মিটিংয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। ডাঃ পলাশ ভাই বলেন “করোনা আক্রান্ত রোগী বা লাশের কাছে যেতে হলে পর্যাপ্ত প্রোটেকশান নিয়ে যেতে হবে। পিপিই অবশ্যই লাগবে। মাস্ক ও পিপিই পরার ও খোলার সুনিদৃষ্ট কিছু নিয়ম আছে। যেনতেনভাবে পরলে কোন কাজ হবে না। আমি আপনাদের সবাইকে এখুনি দেখিয়ে দিতে পারি কিভাবে সেটা পরতে ও খুলতে হয়।” পরে আমিসহ উপস্থিত সকলেই পিপিই পরার ও খোলার নিয়ম শিখে নিই এবং অফিস রুমেই কয়েকটি গ্রুপ ছবি তুলি। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো খুলে আপদকালীন সময়ের জন্য যথাযথভাবে সংরক্ষন করা হয়।
থাক সে কথা, গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একই ধরনের অসংখ্য ফোন পাচ্ছি। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে কেউ বাজারে বসে চা খাচ্ছেন, কেউ মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছেন, কেউ দাওয়াত খাচ্ছেন, কেউ খাওয়াচ্ছেন, কেউ বিয়ে করছেন, কেউ করাচ্ছেন। ফোন পেয়ে মোবাইল কোর্ট টিম নিয়ে ছুটে যাচ্ছি। যারা হোমকোয়ারেন্টাইন মানছেন না তাদেরকে বোঝাচ্ছি কিভাবে হোমকোয়ারেন্টাইন ম্যাইনটেইন করবে, ক্ষেত্র বিশেষে জরিমানা করছি। আমি এ পর্যন্ত বিদেশ ফেরত ২৯ জনের কাছে গিয়েছি, কথা বলেছি। এদের মধ্যে কারো কারো স্বর্দিকাশিও আছে। শুধু মাস্ক আর হ্যান্ড গ্লোভস পরে নিরাপদ দূরত্বে থেকে তাদেরকে বোঝাচ্ছি ঘরে থাকবার জন্য। গতকাল থেকে আমার পেশকারের মাথা ব্যাথা, জ্বর। ড্রাইভারেরও স্বর্দি লেগে গেছে। হয়তো সাধারণ স্বর্দিজ্বর। হয়তোবা না। ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
একদিন মোবাইল কোর্ট না করলেই হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বাজারে বাজারে গিয়ে জরিমানা করছি, হ্যান্ড মাইকে চিৎকার করব সতর্ক করছি, ক্রেতাদের সাথে কথা বলছি। শুধু ছুটছি আর ছুটছি। আপনি ঘরে বসে থেকে ফেইজবুকে বিনামুল্যে জ্ঞান বিতরণ আর দেশ উদ্ধার না করে সম্ভব হলে আপনিও আসুন; স্বেচ্ছাসেবক দলের আমাদের যে ছেলেগুলি দিনরাত রাস্তায় নিজেদের হাত খরচের টাকায় বানানো জীবানুনাশক ছিটাচ্ছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার মাস্ক দিচ্ছে, মানুষকে সতর্ক করছে তাদের দলে যোগদিন। আসন্ন দিনের লকডাউনে থাকা আমার যে রিক্সাচালক/ভ্যানচালক/দিনমজুর ভাইটি আপনার বাড়ির পাশে আছে সম্ভব হলে আজই তার বাড়িতে গিয়ে কিছু চাল, ডাল, তেল, লবন দিয়ে আসুন। সম্ভব হলে আপনার বাড়ির পাশের স্টেশনে/বাজারে অবহেলায় পড়ে থাকা মানষিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করুন। দোহাই আপনাদের যারা দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের কাজ করতে দিন। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের সহায় হবেন। ইনশাআল্লাহ্।
"এখুনি সময় পরস্পরকে সহায়তা করার"
-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন