করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে পুণ্যার্থীদের ঠেকাতে পয়েন্টে পয়েন্ট পুলিশ বেষ্টুনি
লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নানোৎসবে জনসমাগমের বদলে জনশূণ্য ফাঁকা
নূরুজ্জামান মোল্লাঃ প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে উদযাপন ও আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছিলো জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সরকারি নিদের্শে স্নানোৎসবে জনসমাগম ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জ হিন্দু সংগঠনের সমন্বয়ে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের তীর্থ ভূমি লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নানোৎসব স্থগিত ঘোষনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন।
আদি ব্রহ্মপূত্র নদের তীরে ৩১ শে মার্চ মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে পহেলা এপ্রিল বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত স্নানোৎসবে জনসমাগম ঠেকাতে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের নির্দেশে পুলিশের সতর্ক বেষ্টনিতে ছিলো লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবের তিন কিলোমিটার এলাকা।স্নানোৎসবে ১০ লক্ষ জনসমাগম হওয়ার বদলে জনশূণ্য ফাঁকা ব্রহ্মপূত্র নদের তীরে ১৭টি স্নাঘাটসহ লাঙ্গলবন্দ এলাকা। করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবেন মনে এ ভাসনা নিয়ে স্থানীয় হাতে গনা কয়েকজন পুণ্যার্থী কৌশলে স্নান করেন বলে নদের তীরে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।
প্রেমতলা স্নান ঘাটের পাশে চা-পান দোকানদার বৃদ্ধ ইউসুফ মিয়া জানান, ৬২ বছর বয়সে দেখেনি। লাঙ্গলবন্দ স্নান করা বন্ধ হয়েছে।এবছর অনেক স্বপ্ন ছিলো মেলায় দোকানদারি করবো। কিন্তু করোনা ভাইরাসে সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো। মঙ্গলবার থেকে পুলিশ কোনো লোকজনকে স্নান ঘাটলার দিকে ঢুকতে দেয়নি। অন্যান্য বছর পুলিশ, র্যাব বাহিনী হিন্দুদের (স্নান) গোসল করতে নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। এবার স্নানে ঘাটলাগুলোর সামনে পুলিশ ঘিরে রেখেছে। লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে ঢুকার পথ পুলিশ বেষ্টুনিতে রাখা হয়েছে।
কামতাল শ্রী শ্রী ললিত সাধুর আশ্রমের ঘাটে স্নান করতে আসা দিপা রানী জানান, করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মনে এ ভাসনা নিয়ে বহু কষ্টে স্নান করতে এসেছিলাম লাঙ্গলবন্দে। আসার পর পুলিশ স্নান এলাকায় ঢুকতে দেয় না। পরে কৌশলে ললিত সাধুর বাবার আশ্রমের ঘাটে স্নান(গোসল) করেছি। পাপ থেকে পরিত্রান হয় এ বিশ্বাস রেখে সুদীর্ঘ কাল থেকে ব্রহ্মপূত্র নদে লাঙ্গলবন্দে স্নান করতে আসেন।
নারায়ণগঞ্জ পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক সাহা জানান, লাঙ্গলবন্দে দুই দিনব্যাপী স্নানোৎসবে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও দেশ বিদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ দর্শণার্থী সমাবেত হইতো।করোনা ভাইরাসে সংক্রমন ঠেকাতে জনসমাগম ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে স্নানোৎসব বন্ধ রাখা হয়েছে।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শুক্লা সরকার জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর সভা,সমাবেশ,ওয়াজ মাহফিল,তীর্থ যাত্রাসহ সবরকম জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।এ কারণে নারায়ণগঞ্জ হিন্দু সংগঠনের সমন্বয়ে জেলা প্রশাসক লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব বন্ধ ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসকের নিদের্শে লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)মো.রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাচীন যুগ থেকে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী তীর্থ ভূমি লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন উপলক্ষে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো।করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবার স্নান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসবে জনসমাগম ঠেকাতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিন লাঙ্গলবন্দে পূণ্যার্থীদের আগমন ঠেকাতে মাঠে কাজ করেছে পুলিশ।পুলিশের এ সতর্ক অবস্থানে থাকায় পূণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দ তিন কিলোমাটার এলাকায় অবস্থিত স্নানঘাট গুলোতে ঢুকতে পারেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন