করোনাকে জয় করলেন ইউএনও আইরিন আক্তার ও তার অবুজ শিশু।
মোঃ নুর নবী জনিঃ করোনাকে ভয় নয় জয় করলেন মানিকগন্জ ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার ও তার আড়াই বছরের ছোট্ট শিশু।
গতকাল বুধবার রাতে জেলা প্রশাসককে তিনি ফোন করে তার করোনা পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ এই সুসংবাদ দেন। গত ২৩মে তাঁর এক মাত্র শিশু কন্যাসহ তার করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছিল।
প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আক্রান্ত হওয়ার আগে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে ঘরমুখী করতে,মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহন বন্ধ রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অসহায় মানুষের ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে দিন-রাত ছুটে বেড়িয়েছেন আইরিন আক্তার। নিজের শরীরে ও তার নিষ্পাপ শিশুর এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরও তিনি দায়িত্ব থেকে নিবৃত্ত হননি। কোয়ার্টারের নিচ তলায় আইসোলেশনে থেকে দাপ্তরিক কাজ ছাড়াও অন্য আক্রান্তদের খোঁজখবর নেওয়াসহ করোনা প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন।
এসব বিষয় নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় আইরিন আক্তারের সঙ্গে তিনি আজকের সংবাদ কে জানান, হালকা কাশি ও অ্যাজমার সমস্যা ছাড়া তাঁর তেমন কিছু ছিল না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসে করোনা পজিটিভ,শব্দটি শুনে তিনি মোটেই ভীত বা ভেঙে পড়েননি। বরং দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিবারকে বুঝিয়ে কোয়ার্টারের দোতলায় সবকিছু আলাদা করে আইসোলেশনে চলে যান।
তবে তাঁর আড়াই বছরের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কিছুটা বিচলিত ছিলেন।তার করোনায় আক্রান্তের কথা শুনি ছুটে গেলেন সেই শিশু কন্যার পিতা ও নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তারের স্বামী ঢাকায় করোনা প্রতিরোধে দায়িত্ব পালনে নির্ভীক যোদ্ধা এক্সিকিউটিভ ম্যা.বি এম রুহুল আমিন রিমন।স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করে স্বামী এক্সিকিউটিভ ম্যা.বি এম রুহুল আমিন রিমন স্ত্রী ইউএনও আইরিন আক্তার ও তার বাচ্চার বিচ্ছিন্ন পৃথিবীতে স্বেচ্ছায় সঙ্গী হলেন। করোনা যুদ্ধে "বাঁচলে একসাথে বাঁচবো,মরলে এক সাথে মরবো" তার এই কথাটিতে আরেকবার নতুন করে চিনিয়ে দিলো স্ত্রী আইরিন আক্তারকে।
ইউএনও আইরিন আক্তার বলেন,এই কয়টি দিনে আমার স্বামী যেভাবে স্বেচ্ছায় সঙ্গী হয়ে আমাদের সেবাশুশ্রূষা করেছে, তা আমার কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিলো।করোনা যুদ্ধে "বাঁচলে একসাথে বাঁচবো, মরলে একসাথে মরবো" তার এই কথাটিতে আরেক বার নতুন করে চিনিয়ে দিলো আমাকে।
আমাদের অনেক শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়র স্যার সামাজিক দুরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাকে আমাদের (করোনা পজিটিভ) পাশে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমার বাচ্চাকে সামাজিক দুরত্ব, আইসোলেশন বুঝানোর কোন উপায় আমাদের জানা ছিলোনা। সে বাবা মা দুজনকে একসাথে পেয়ে একা একা আইসোলেশনে থাকার কষ্টটা একটুও বুঝতে পারেনি, বরং সে বেশ হাসিখুশিই ছিলো,দুষ্টুমি আগের চেয়ে আরো বেড়ে গিয়েছিল। ওর জীবনে এতো দীর্ঘসময় বাবা মাকে নিবিড়ভাবে পাওয়ার সুযোগ খুব কমই এসেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ১২ দিন আইসোলেশনে থেকে পরপর দুবার নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে।
প্রথমেই তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স জাতীয় ওষুধ খাওয়া, পরিবারসহ স্বজন আর শুভানুধ্যায়ীদের অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসায় তিনি করোনাকে জয় করেছেন। এ সময় প্রোটিন ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার, গরম পানি, লং-আদা দিয়ে চা—এসব বেশি খেয়েছেন। গোসল করেছেন গরম পানি দিয়ে। দাপ্তরিক কাজ ছাড়াও লেখালেখি ও বই পড়ে সময় কেটেছে তাঁর। করোনায় কোনো ধরনের ভয় বা গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। মনোবল শক্ত করে নিয়ম মেনে চললে সহজেই করোনা জয় করা যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।অশেষ কৃতজ্ঞতা মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি যার অশেষ কৃপায় এ যাত্রায় আমরা বেঁচে ফিরেছি।
এই সংকটময় সময়ে আমার মনোবল বৃদ্ধিতে সাহস দেয়ার জন্য। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই জেলা প্রশাসক স্যারকে, মানিকগঞ্জ -১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এ, এম, নাঈমুর রহমান দুর্জয় মহোদয় এবং ঘিওর উপজেলা পরিষদের উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কে।আমার সকল ব্যাচমেট,সহকর্মী,সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিগণ,প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ,আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষী সর্বোপরি ঘিওরের সাধারণ মানুষের প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা। করোনায় আক্রান্ত না হলে হয়তো আমার প্রতি আপনাদের এতোটা আস্থা আর ভালোবাসা এভাবে বহিঃপ্রকাশ ঘটতো না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন