সাংবাদিক ইলিয়াসের দাফন সম্পন্ন, ৩ খুনি ৩ দিনের রিমান্ডে
আজকের সংবাদ ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাংবাদিক ইলিয়াছ (৫২) কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামি তুষার (২৮), মিনা (৬০) ও মিসির আলী (৫৩) কে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুননাহার ইয়াসমিন তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
সোমবার(১২অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড শুনানি শেষে বিধি মোতাবেক জিজ্ঞাসাবাদ করতে বন্দর থানা পুলিশ কে নির্দেশ দেন ।
এর পূর্বে সাংবাদিক ইলিয়াসকে খুন করার ঘটনায় বন্দর থানা পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠায় ।
এদিকে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সাংবাদিক ইলিয়াসের লাশ ময়নাতদন্তের পর সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বন্দরের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, রবিবার রাত আটটার দিকে উপজেলার জিওধারা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক ইলিয়াসকে উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে বন্দরের তিতাস গ্যাস চুরির সাথে সম্পৃক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা ।
স্থানীয়দের দাবি,এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পরিকল্পিতভাবে ইলিয়াছকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বন্দর এলাকার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারী অপরাধী চক্রের হোতাদের শেল্টারে গ্রেফতারকৃত অপরাধীরা এমন অপরাধের ঘটনা ঘটাতে সাহস করেছে । এমন অপরাধীদের সংখ্যা অনেক রয়েছে বন্দর উপজেলায় বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ।
নিহতের স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামীর সাথে কারো কোন শত্রুতা ছিলো না। ঝগড়া বিবাদ ছিলো না। কেন,কি অপরাধে আমার স্বামীকে হত্যা করা হলো? আমি খুনীদের বিচার চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী তাওলাদ হোসেন জানান,স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম দৈনিক বিজয়ের সংবাদকর্মী ইলিয়াছকে শনিবার রাত আটটার দিকে জিওধারা চৌরাস্তা এলাকায় একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী তুষার ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে ইলিয়াছকে মারধরের পর শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দ্রুতপালিয়ে যায় তারা। পরে গুরুতর অবস্থায় ইলিয়াকে সদরের জেনারেল হাসাপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান।
তাওলাদ হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমি দেখলাম তুষার হঠাৎ করে ইলিয়াস কে দেখে তার বাবা মা তুলে গালিগালাজ করে বুকে একটা ঘুষি দেয়।
আর বলতে থাকে, তুই কতো বড় সাংবাদিক হইছিস? আমি এখন তোরে দেখাইয়া দিব। এই বলে ইলয়াছকে মারধর করতে করতে টেনে হেঁচড়ে একটা অন্ধকার স্থানে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর কাছে গিয়ে দেখি ইলিয়াছের গায়ের শার্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তার বুকে ও পেটে তিন চার জায়গায় ছুরিকাঘাতের ক্ষত। সেই ক্ষত স্থান গুলো দিয়ে সমানে রক্ত ঝরছে। পরে তার স্ত্রীকে ফোন করে খবর দেই। তারা আসলে আমি সহ এলাকাবাসি ইলিয়াছকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে আনি। পরে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।
নিহত ইলিয়াছের ভাগিনা পলাশ বলেন, গ্যাস চুরির অবৈধ সংযোগ ছাড়াও মাদক ব্যবসায়ী তুষার আর তার বাহিনী এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে। আমার মামা তাদের বিরুদ্ধে নিউজ করছে বলে তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।
দৈনিক বিজয় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ সেন্টু বলেন, মাদক ব্যবসায়ী তুষার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সাংবাদিক ইলিয়াছকে টার্গেট করে তারা। সেই থেকে ইলিয়াছের প্রতি মাদক ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফখরুদ্দিন ভূঁইয়া জানান, সাংবাদিক ইলিয়াছকে কুপিয়ে হত্যার সাথে জড়িত অভিযোগে তুষার, মিনা ও মিছির আলীর রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত । প্রকৃত ঘটনা জানতে পুলিশের কাজ আরো সহজ হবে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন