সোনারগাঁ জি,আর ইনষ্টিটিউশন স্কুলের অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ,অপসারণের দাবী
মোঃ নুর নবী জনিঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ১১৯ বছরের সবচেয়ে পুরনো সোনারগাঁ জি,আর ইনষ্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তার দুনীর্তি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীরা কয়েকবার মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ করলেও অদৃশ্য কারনে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন বলে এবার শিক্ষাথী ও অভিভাবকরা অপসারণ চেয়ে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
গতকাল সোমবার সকালে সোনারগাঁ উপজেলার পানাম নগর সোনারগাঁ জি আর ইনষ্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়।
আর্থিক লেনদেন,ভবন তৈরিতে অনিয়ম ও শিক্ষার্থী অভিভাবকেরদের সাথে কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার,জোর করে করোনা কালিন বেতন নেয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যাক্ষ সুলতান মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এসময় স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা জানান, দুর্নীতিবাজ সুলতান কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার সন্তানের সব মালয়শিয়ায় লেখাপড়া করছে। অধ্যক্ষের পুরো পরিবার মালশিয়ায় থাকায় সে পিএইচডি করার অযুহাতে ইতি মধ্যে ২ বছরের জন্য ছুটির আবেদন করেছে। এর মাঝে একবছর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে বেতন নিবেন এবং এক বছর বেতন বিহীন ছুটি। যা সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক। তবে একাধিক অভিভাবক সদস্য জানান তিনি বছরে দু’এক বার বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করে সময় কাটান। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ দুদক গ্রহন করেছে এবং যে কোন সময় তদন্ত নামবে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা।এসময় অভিভাবকরা এমপি খোকাকে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তারা আরোও জানান,এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, পরির্দশন ও নিরীক্ষা অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিসে ভুক্তভোগী ১৫শ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অভিভাবক কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বিভিন্ন অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ কায়সার হাসনাতের সহযোগিতায় অধ্যক্ষ হওয়ার কোন যোগ্যতা না থাকলেও মামার পরিচয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সুলতান মিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়, আইন অনুযায়ী শিক্ষা বিভাগে একটি তৃতীয় বিভাগ থাকলে কেউ অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। অথচ এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে পাশ করা সুলতান মিয়া অধ্যক্ষ!
একাধিক অভিভাবক জানান, সদ্য এসএসসি পরিক্ষার ফরমপূরণ করতে তিনি নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন। এছাড়াও পরিচালনা কমিটির অনেক সদস্যকে অন্ধকারে রেখে অতিরিক্ত ফি আদায় করে টেস্টে ৬ বিষয়ে অকৃতকার্যদের ফরম পুরন করার অনুমতি প্রদান করেছেন। ফেল কার প্রতি বিষয়ে ৩-৬ শত টাকা জড়িমানা নিয়ে প্রায় ৮৩জনকে এসএসসি পরিক্ষায় অংগ্রহন করা সুযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিভাবক কমিটির সদস্য দুলাল মিয়া জানান, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে যাতে টাকা না নেয় অথচ অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া তার ইচ্ছে মতো জোর করে টাকা নিচ্ছেন। বিগত বছরে এসএসসিতে যারা ৬ বিষয়ে ফেল করেছে তারা এসএসসিতে নিশ্চিত ফেল করবে জেনেও টাকার লোভে আমাদেরকে না জানিয়ে ফরম পূরণ করিয়েছে। যা পাশের হার ৩০-৪৭% এ নামিয়ে আনবে। তাছাড়া আদায়কৃত প্রায় ২ লাখ টাকা কোন খাতে জমা হয়েছে তাও স্পস্ট নয়। সুলতান মিয়া চতুমুখী দুনীতির সাথে জড়িত। সে ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদার ছাড়া নিজেই স্কুলের নতুন ভবন করেছে। পুরো টাকা স্কুল ফান্ড থেকে উত্তোলন দেখিয়েছে। অথচ জেলা পরিষদের বরাদ্ধ, পুরাতন ছাত্রদের অর্থায়ন,অভিভাবক কমিটির অর্থায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ হলেও তা উল্লেখ করা হয়নি।
জানা যায়, স্কুল ও কলেজ শাখা মিলিয়ে প্রায় ২৫ শত শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। প্রতিবছর ভর্তি ফি থেকে আসে ৩২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বেতন থেকে প্রতিমাসে আসে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা হিসেবে বাৎসরিক ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরিক্ষার ফি থেকে আসে ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ফি বছরে জমা হয় ২৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠান থেকে বাৎসরিক আয় ১ কোটি ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। যা থেকে প্রতিমাসে শিক্ষকদের বেতন হিসেবে ব্যয় হয় ৬ লাখ ১ হাজার ৯ শত ৪ টাকা। অর্থাৎ বাৎসরিক ব্যয় ৭২ লাখ ২২ হাজার ৮ শত ৪৮ টাকা। বেতন দেয়ার পরও বিদ্যালয়ের আয় থাকে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ১শত ৫২ টাকা। বিবিধ খরচ হিসেবে বছরে যদি ১২ লাখ টাকাও খরচ হয় তবু বিদ্যালয়ের সঞ্চয় থাকবে ৩২ লাখ ৪৯ হাজার ১শত ৫২ টাকা। হিসাব মতে সুলতান মিয়ার ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা থাকার কথা ৩ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৫শত ২০ টাকা। যার কোন হদিস মিলছে না। এছাড়াও সরকারি কোষাগার থেকে শিক্ষকদের বেতন হিসেবে প্রতিমাসে জমা হয় ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩ শত ৬৪ টাকা। তবে এখানে কোচিং বানিজ্যের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া বলেছেন, একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে এসব করছে। প্রতিষ্ঠানটির কল্যাণে যা যা করা দরকার আমি তাই করছি। আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি বলেই একটি চক্র আমার পেছনে লেগেছে।
সোনারগাঁ উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম প্রধান জানান, এর সত্যতা পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন