ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না,মোগরাপাড়া তহসিল অফিসে,১১৫০ টাকার ফি আদায় হয় ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজারে
সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ-নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ভূমি অফিসে ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগীরা। এতে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়ছেন সেবা নিতে আশা গ্রাহকরা। ওই সকল ভূমি অফিসে নিয়োজিত দালাল এবং ওমেদারদের দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন ভূমি কর্মকর্তারা। ঘুষ না দিলে মাসের পর মাস ফাইল নিয়ে কড়া নাড়তে হয় তাদের দরজায়। বিভিন্ন অজুহাতে আদায় করা হয় মোটা অংকের উৎকোচ। এই অবস্থা চলছে মাসের পর মাস। দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোগরাপাড়া ভূমি কার্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে অর্ধশতাধিক লোক অপেক্ষা করছে। এখানে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন তহসিলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন জালাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি।
মোগরাপাড়া ইউনিয়নের তহসিল এর ভূমি সহকারী কর্মকর্তার জালাল উদ্দীন তিনি ভৈরবদী গ্রাম থেকে খারিজ করতে আসা মামুনের সঙ্গে উচ্চস্বরে বলছেন, লাখ টাকার জমি কিনেছেন,আর ওমেদারদের ৩/৪হাজার টাকা বকশিস দিতে কষ্ট লাগে। ভূমি কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে পড়েন।এমনকি এই কর্মকর্তা কিছু লোককে ওপেন বলেন আপনারা যদি খারিজ করতে ১০ হাজার টাকা নেন তাহলে আমাদের পাঁচ হাজার দিতে বাঁধা কই, মিলে মিশে খাই সমস্যা কোথায় বলেন?
ভুক্তভোগী মামুন জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই খারিজ করারা জন্য দৌড়াদুড়ি করছি এর আগের ফাইলটি নায়েব সাহেব না-মন্জুর করে দিয়েছেন এবার তিন ভাগে দিলাম তার পরও তিনি ৩ মাস হয়ে গেলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে খারিজ ফাইল এখনো ছারছে না অফিস সহকারী রাশেদ বলছেন তার লোকের সাথে কথা বলতে অন্য দিকে নায়েব জালাল সাহেব বলেন,ওমেদারদের কে বকশিস দিয়ে ফাইল ছাড়াতে। জানি না কবে খারিজের কাগজ পাবো এক মাত্র আল্লাহই জানে।
বন্দরা ও হাবীবপুর থেকে আসা কয়েক ব্যক্তি জানান, টাকা না দিলে এই অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে নায়েব পর্যন্ত ফাইলে হাত দেন না। টাকা দিলে কাগজ ঠিক থাকে। টাকা না দিলে কাগজ বেঠিক হয়ে যায়। এক প্রকার প্রকাশ্যেই ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন সেবার নামে এসকল ভূমি কর্মকার্তারা। শুধু তাই নয় একটা পর্চা তুলতে গুনতে হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।এমনকি অনলাইন ডাটা এন্ট্রির জন্যও ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন তিনি।
হাবীবপুর গ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা মোক্তার হোসেন বলেন,আমার কাছ থেকে টাকা চেয়ে না পেয়ে আমার নামে ৫৫০১ নং নামজারী টি প্রতিবেদন দাখিল করে দেয়, আমি এসিল্যান্ড সাহেবকে বলে ফেরত আনার পরও নানাঅজুহাত দেখিয়ে টাকা চাচ্ছেন জানি না জালাল উদ্দীন সাহেবের অত্যাচার কবে শেষ হবে,আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।এদিকে তহসিল অফিসের সামনে থাকা দোকানদার ও ভুক্ত ভোগীরা বলেন, এক থেকে পাঁচ শতাংশ জায়গায় জন্য ২০ হাজার, পাঁচ থেকে দশ শতাংশ জায়গার জন্য ৪০ হাজার, দশ থেকে বিশ শতাংশ জায়গার জন্য ৬০ হাজার টাকা খারিজ বাবদ নেয়া হয় এই অফিসে।কাগজ পত্র ঠিক থাকলেও দিতে হয় টাকা আর কাগজপত্র ঠিক না থাকলে টাকার অংক দ্বিগুণ থেকে চারগুণ পর্যন্ত আদায় করেন তারা।
কথা হয় খরিজ করতে আসা শরীফ এলাকার বাসিন্দা শুক্কুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে কোনরকম সেবা পান না তারা। এই অফিসের কর্মকর্তারা মুনিব আর আমরা তাদের গোলাম বনে গেছি।সরকারিভাবে খারিজ বাবদ ১১৫০ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও তারা ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খারিজ বাবদ আদায় করে থাকেন। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে দুর্নীতিবাজ ভুমিকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়,সরকারি নীতিমালা অমান্য করে মোগরাপাড়া কার্যালয়ে নায়েব জালাল উদ্দীন কিছু ওমেদারদের পছন্দের পাত্র করে তাদের মাধ্যোমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তার সাথে সাথে ওমেদাররাও লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে গেছেন।এখন সর্বসাধারনের প্রশ্ন হলো দুজন ওমেদার যদি লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয় তাহলে তাদের ভুমি কর্মকর্তারা কত টাকার মালিক?
এমনও জানাগেছে ভূমি কর্মকর্তারা যেখানে বদলি হন সেই কার্যালয়ে তাদের পছন্দের ওমেদারদের নিয়ে যান। শর্ত একটাই কাড়ি কাড়ি টাকা কামাতে হবে। ওমেদারদের দিয়ে কাজের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেন ওই সকল ভুমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা,এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অভিযোগে প্রকাশ,মোগরাপাড়া ভূমি অফিসের ভুমি সহকারী কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন অবৈধভাবে বহু টাকার মালিক বনে গেছেন। অনুসন্ধানে তাদের সম্পত্তি বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।এলাকার অনেক লোকই বলছেন জালাল উদ্দীন অফিস চলাকালিন সময়েও তার অফিসের এক মহিলা কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়ও দেখা গেছে।
এ বিষয়ে মোগরাপাড়া ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন এর ফোন নং ০১৭১১-৩৮২৭৮২ তে একাধিক বার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি অফিসকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কোনো কর্মকর্তা ও ওমেদার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল ইসলাম বলেন, ভূমি কার্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। যদি কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরবর্তীতে আসছে নায়েব জালাল উদ্দীন বৈদ্যেরবাজার ও হোসেনপুর ইউনিয়নের থাকা কালিন অপকর্ম নিয়ে বিস্তারিত------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন