বন্দরে চেয়ারম্যানের পেটে ফসলি জমি,অসহায় প্রান্তিক চাষীরা
বন্দর প্রতিনিধি :-সকালে বলেন, বিকালে বলেন আর রাতেই বলেন সব সময় মাটি কাটেন তারা। ভেকু দিয়ে রাত দিন মাটি কেঁটে নিয়ে যাচ্ছেন ইট ভাটায়। মাটি কাঁটতে কাঁটতে বাখরাবাদ দিয়ে যে তিতাস গ্যাসের লাইন এসেছে সেই বড় লাইনও বের করে ফেলেছেন মাটি খোকোরা। তাদের কিছুই বলা যাচ্ছে না। কিছু বলতে গেলেই চেয়ারম্যান সাব লোক পাঠায়। মারধরের হুমকি দেয়। অনেকেই তার কথায় নাম মাত্র মূল্যে ক্ষেতের মাটি বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা সাত ভাই তাই আমরা বেঁচে আছি। কথাগুলো অকপটে বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেওঢালা লাঙ্গলবন্দ এলাকার এক স্থানীয় কৃষক। তিনি দাবি করেন, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ কৃষকের জমি থেকে জোড় পূবর্ক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। সোনালী ফসলের সকল মাটি কেটে তার ও তার সহযোগীদের ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন এই চেয়ারম্যান।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কেওঢালার জাঙ্গাল এলাকার মত লাঙ্গলবন্দ সহ বিভিন্নস্থানে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে অনেকাংশেই কমে গেছে জমিতে কৃষকের ফসলি আবাদ। আবার অনেকেই বাধ্য হয়ে প্রভাবশালীদের চাপে বিক্রি করে দিচ্ছে নিজের ফসলি জমিটি। স্থানীয় কৃষকরা বলছে দিনে জমি দেখা গেলেও রাতের আধারেই মাটি কেটে সাবার করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। নাম মাত্র মূল্যে জমি ক্রয় করে সে জমির মাটিগুলো দেয়া হচ্ছে ইটভাটার বিভিন্ন খোলাতে। শুধু তাই নয়, কেওঢালা জাঙ্গাল এলাকায় মাটির নিচ দিয়ে মূল গ্যাস সংযোগ নেয়া সরকারী একুয়ার করা জমিটিও রক্ষা পাইনি, সেসকল মাটি খেকোদের কাছ থেকে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষক এবং এই জেলার সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে জাঙ্গাল, কেওঢালা, লাঙ্গলবন্দ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আশপাশের জমি থেকে মাটি কেটে ওই ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় ভাটার মালিককে জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরও ভাটায় ইট তৈরির কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ ও তার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদের মাকসুদ চেয়ারম্যান তারা দুজনই মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তারাই দিব্বি পকেট ভারীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন ইটভাটার মৌসুমে। জোড় করে কৃষকের জমি দখল করে এই দুই চেয়ারম্যান মাটি বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইটভাটা বন্ধ করে জরিমানা করলেও আবার কিছুদিন পর আবারো ভাটা চালু করেন।
কেওঢালা এলাকার বাসিন্দা আলী হায়দার এই প্রতিবেদককে বলেন, ফসলি জামি কেটে নিয়ে যাচ্ছে চেয়ারম্যান মাসুম ও চেয়ারম্যান মাকসুদ। পাশাপাশি মাসুম চেয়ারম্যান সরকারি নিয়ম অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা করছেন। ভাটার ধুলা আর ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষিজ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষিজমির পাশেই অবৈধভাবে ওই ইটভাটাটি গড়ে উঠেছে। এ কারণে এলাকার কৃষি আজ বিপর্যয়ের মুখে। কৃষিজমির পাশে ইটভাটা হতে পারে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিচালক বলেন, ইটভাটা গুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা আবারো এগুলো বন্ধ করে দিবো।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, ‘তদন্ত করে ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন