হেফাজত কান্ডে,জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা,নিন্দা ও প্রতিবাদ
সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ- নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে হেফাজত কান্ডে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের রাজনিতিক কোণঠাসায় ফেলতে নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল।
তিনি বলেন,সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হক ইস্যুকে কেন্দ্র করে রয়েল রিসোর্ট, আওয়ামীলীগ কার্যালয়, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতির শাহ মোঃ সোহাগ রনির বাড়িঘর, গাড়িও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তান্ডবলীলা চালিয়েছেন হেফাজত নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুরের তান্ডবের ঘটনাও ছিল। এ ছাড়াও স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লাঞ্ছিত করেছে হেফাজত কর্মীরা। এসব ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পৃথক ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি পুুলিশ বাদী ১টি সাংবাদিক বাদি ও বাকি ৪টি মামলার বাদী যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের আত্মীয়-স্বজন।
এর মধ্যে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় যে মামলা দায়ের করেছেন, সেখানে হেফাজত নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশির ভাগ আসামিই জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীসহ আওয়ামীলীগের কর্মীরা। একইভাবে উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন সেখানেও একই অবস্থা।
আবু নাঈম ইকবাল বলেন,এই মামলা গুলোতে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কোনো রকম সম্পৃক্ততা না থাকলেও উদ্দেশ্যে মুলকভাবে নাম জড়ানো হয়েছে,শুধু মাত্র আমাদের অঙ্গ-সংগঠন গুলোকে দূবর্ল করার জন্যই তাদের এই পরিকল্পনা।
তিনি বলেন এর মধ্যে আমাকেসহ জাতীয় পার্টির সোনারগাঁ পৌরসভা সভাপতি এম এ জামান,সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মাস্টার,জেলা যুব সংহতির যুগ্ম আহবায়ক কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু,কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছসেবক পার্টির সদস্য ও পিরোজপুর ইউপি সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন,জেলা স্বেচ্ছসেবক পার্টির সদস্য পিরোজপুর ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান,এম এম হোসাইন হিরু,জাতীয় পার্টিনেতা মুক্তার হোসেন ও আমরা করোনা যোদ্ধো স্বেচ্ছসেবী দলের টিম লিডার সানাউল্লাহ বেপারিসহ অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কে ও ছাড় দেননি।এসময় আবু নাঈম ইকবাল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে আহবান জানান সেই সাথে মামলা দায়ের করা হয় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন,সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টির এম পি লিয়াকত হোসেন খোকা সোনারগাঁয়ের পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি সহ ইউনিয়ন কমিটি ও পৌরসভার সম্মেলন করে সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টির ভীত শক্ত করেছেন। অপরদিকে লিয়াকত হোসেন খোকাকে বিতর্কিত করতে হেফাজতকে জড়িয়ে জাতীয় পার্টির সুনাম এবং সোনারগাঁয়ের উন্নয়ন সরকারের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এই ঘৃণ্য নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে চায় একটি মহল। আমরা দ্যার্থহীন কন্ঠে বলতে চাই সেদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ কিংবা অন্য কোন মাধ্যম কোন ভাবেই বলতে পারবে না হেফাজতের এই কান্ডে জাতীয় পার্টির সম্পৃক্ততা আছে।
ঘটনা সূত্রে জানাযায়,গত (৩রা এপ্রিল) শনিবার সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে আসেন কেন্দ্রীয় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। ওই সময় তার সঙ্গে এক নারী ছিলেন যাকে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেছিলেন। ওইদিন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনিসহ স্থানীয়রা মামুনুল হককে নারীসহ আটক করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাটি স্থানীয় এলাকাবাসী যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছারাও সংবাদকর্মীরা ভিডিও ধারণ করেন।
এসময় খবরটি লাইভ প্রচারিত হলে হেফাজতের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে রয়েল রিসোর্টে হামলা ভাংচুর চালিয়ে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা রফিকুল ইসলাম নান্নু ও সোহাগ রনির বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর চালায় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুর চালায়। পরবর্তীতে ৫ এপ্রিল চ্যানেল এস এর স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা ভাংচুর চালিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় এ সময় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
গত ৯ই এপ্রিল সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে ১২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসেনকে।
উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন বাদী হয়ে ১১১জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।
একইভাবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনির বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় সোহাগ রনির পিতা সাবেক মেম্বার শাহ জামাল তোতা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০০/৩০০জনকে আসামি করা হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িঘর ভাংচুুর ও তার উপর হামলার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। তিনি মোজ্জামেল হক আরিফকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৮০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
তবে ঘটনার এক দিন পর সোনারগাঁ থানা পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের। করেন। এসআই ইয়াউর রহমান বাদী হয়ে মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে এবং ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০/৩০০ জন কে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মুলত রয়েল রিসোর্টের ঘটনায় তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তান্ডবের ঘটনায় এসআই আরিফ হাওলাদার বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে এবং ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন