জনিঃ-২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ সদরের আলীরটেকস্থ এক সরিষা ক্ষেতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ১০ বছরের শিশু গণধর্ষণের পর হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসির কারাদন্ডে দন্ডিত প্রধান আসামী সুজন দীর্ঘ ১৯ বছর পলাতক থাকার পর ঢাকার বাড্ডা থেকে র্যাব-১১র হাতে গ্রেফতার।
রোববার(২৩ অক্টোবর) রাতে ডিএমপি, ঢাকার বাড্ডা থানা এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
উল্লেখ্য যে গত ১৩ জানুয়ারি ২০০৩ তারিখ সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার আলীরটেক এলাকায় একটি ১০ বছরের শিশু গণধর্ষণপূর্বক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যাকান্ডের পরের দিন শিশুটির লাশ সরিষা ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় জনগন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও শিশুটির পরিবারকে জানায়।
এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশটিকে উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল তৈরী করে এবং লাশটি সদর উপজেলার আলীরটেক এলাকার আলী আকবরের মেয়ে খাদিজা আক্তার (১০) বলে সনাক্ত করেন।
এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এ একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ০৯(০১)০৩, ধারা ৯(৩)। পরবর্তীতে নিহতের ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল মর্মে উল্লেখ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সংশ্লিষ্ট চার্জশীট পর্যালোচনায় জানা যায় যে, ঘটনার দিন দুপুরে ভিকটিম খাদিজা (১০) এবং তার এক প্রতিবেশী বান্ধবী আলীরটেকে অনুষ্ঠিতব্য একটি মাহফিল দেখার জন্য ১নং আসামী সুজনের বাড়ীতে যায়। সুজন নিহত ভিকটিমের দুঃসম্পর্কের আত্বীয় বলে জানা যায়। সুজনের বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্রতিবেশী বান্ধবীর নিকটস্থ খালার বাসায় তারা বেড়াতে যায়। পরবর্তীতে রাত হয়ে গেলে
ভিকটিমের বান্ধবী তার খালার বাসায় থেকে যায়। ইতিমধ্যে পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুজন ভিকটিমকে তার বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সাথে নিয়ে আসে। পথিমধ্যে সুজন এবং ওৎ পেতে থাকা তার আরও তিন সহযোগী পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিমকে জোরপূর্বক একটি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে ভিকটিমের পরিহিত পোশাক দিয়ে হাত, পা, মুখ বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে এই চার নরপিশাচ ভিকটিমের বুকের পাজর, হাত ও পা বিকৃত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখমসহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা এতই নৃশংস ছিল যে ভিকটিমের মৃত্যু পরও ধর্ষণ চালিয়ে যায়। ধর্ষণ শেষে লাশটিকে সরিষা ক্ষেতে রেখে সবাই পালিয়ে যায়।
পরে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত, নারায়ণগঞ্জ বিচার শেষে মামলার পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৩) ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানীত হওয়ায় গত ১১ জুন ২০১৮ তারিখে চার গণধর্ষককে উক্ত আইনের উক্ত ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত পূর্বক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করার আদেশ দেন।
সেই সাথে বিজ্ঞ আদালত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় বর্ণিত বিধান মোতাবেক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত উক্ত আসামীকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কর্যকর করার আদেশ প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীর ভাষ্যমতে ঘটনার পর পরেই সে দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্বগোপন করে। দীর্ঘদিন পর সে নারায়ণগঞ্জে ফেরত এসে পরিচয়
গোপন করে ২নং রেলগেটস্থ একটি কাপড়ের দোকানে চাকুরী করা শুরু করে এবং এই পেশাকে গ্রেফতার এড়ানোর ঢাল হিসেবে বেছে নেয়। ইতিমধ্যে সে নিজের নাম এবং বয়স পরিবর্তন করে ২০১৪ সালে পাসপোর্ট ও ২০১৬ সালে
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে। দীর্ঘদিন চাকুরী করে ২০১৭ সালে সে ইরাকে গমন করে এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসে। দেশে ফিরে সে জমি সংক্রান্ত ব্যবসায় জড়িত হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের মার্চ মাসে সে পুনরায় সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করলেও সুবিধা করতে না পেরে ৩ মাস পর দেশে ফেরত আসে। দেশে ফেরত এসে সে আত্বগোপনে অবস্থান করতে থাকে।
র্যাব আরোও জানায় এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্য ৩ আসামীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব-১১র অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন