সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ-দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ধরে মেঘনা গ্রুপের অবৈধ দখলে রাখা ২৭০ শতাংশ জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ আদেশ হতে পারে চলতি মাসের ২৮ নভেম্বর।
ইতোমধ্যে উচ্ছেদ পূর্ব যাবতীয় খরচ আদালতকে অবগত করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এমনটাই জানিয়েছেন (এ সংক্রান্ত সকল নথি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত)। আদালত সূত্র জানায়, ফ্রেশ ব্র্যান্ডখ্যাত মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা শিল্পাঞ্চল এলাকায় ২০০১ সালে কোম্পানী প্রতিষ্ঠাকালীন জমি ক্রয় করার সময় পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা গ্রামের আঃ আজিজ সরকারের চর রমজান সোনাউল্লাহ মৌজায় ২ একর ৭০ শতক (২৭০ শতাংশ) জমি অবৈধভাবে দখল করে।
প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগী আঃ আজিজের জমি সাধারণভাবেই নিবে, মেঘনা গ্রুপের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে ওই জমির কোন সমাধান না করে অবৈধভাবে বালু ফেলে জোর পূর্বক দখলে নেয় মেঘনা গ্রুপ। পরে সেখানে প্রতিষ্ঠানটি ইউনিডেব (ডিবি) লিঃ নামে মেঘনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। জমির মালিক আঃ আজিজ জমির বিষয়ে কোন সুরাহা না পেয়ে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে ০৮/২০০১ একটি পিয়েনশন মামলা দায়ের করে। মামলায় ২০০৫ সালের ২৮ জুন বাদী আঃ আজিজ তার পক্ষে রায় পান। বিবাদী মেঘনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনিডেব (বিডি) লিঃ এর পরিচালক তাহমিনা আক্তার রায়ে ক্ষুব্দ হয়ে একই বছর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল (আপিল নং ৫৩) করে। মাননীয় বিজ্ঞ আদালত ওই আপিল ২০০৭ সালের ৫ মার্চ খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখেন।
পরবর্তীতে ইউনিডেব (বিডি) লিঃ এর পক্ষে তাহমিনা আক্তার এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি সিভিল রিভিশন নং ১৬৩৭/২০০৭ দাখিল করে। উচ্চ আদালত ২০১১ সালের ১৯ মে মামলাটি মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে বাদী আঃ আজিজ ওই আদশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে লিপ টু আপিল ১৩২৯/২০১২ মোকদ্দমা দায়ের করেন। আঃ আজিজের দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারী মঞ্জুর করে। পরে বাদীর পক্ষে মহামান্যসুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ এর সিভিল আপিল নং ১৯২/ ২০১৬ নং মোকদ্দমাটি বিগত ২০১৯ সালের ১২ মার্চ রায় দেন।
রায়ে বিবাদী তাহমিনা আক্তার ক্ষুব্দ হয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সিভিল রিভিউ পিটিশন নং ২১৪/২০১৯ মোকদ্দমা দায়ের করে। উক্ত সিভিল রিভিউটি বিগত ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল না মঞ্জুর করে আঃ আজিজের পক্ষে রায় বহাল রাখেন এবং মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য পূণরায় নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে পাঠিয়ে দেন।এদিকে, নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে মামলাটি আসলে বাদি আঃ আজিজ চলতি বছরের ১৩ জুলাই নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে জমি উদ্ধারের জন্যে আবেদন করেন এবং চলতি বছরের ৪ আগস্ট আদালত দখলী পরওয়ানা জারী করেন। ৪ সেপ্টেম্বর জারীকারক দুপুরে ওই সম্পত্তিতে যান এবং সম্পত্তিতে একাধিক স্থায়ী স্থাপনা দেখেন। মেঘনা গ্রুপের অবৈধ দখলে থাকা ওই সম্পত্তিতে যে সকল স্থাপনা রয়েছে সে সকল স্থাপনা ভাঙ্গা পরবর্তী উচ্ছেদ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে মর্মে বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এড়াতে নাজির ও পুলিশের সহায়তায় জমি অবৈধ দখল মুক্ত করার ব্যবস্থা করতে পদক্ষেপ গ্রহণে জন্য আবেদন করেন।
আদালত আবেদনটি আমলে নেন এবং আবেদন মোতাবেক উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে জনবল ও দুই দিনের রাস্তা খরচ বাবদ কোন খাতে কি পরিমান খরচ হবে তা জানতে চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর চিঠি ইস্যু করার জন্য চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত এ সংক্রান্তে আগামী ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। এদিকে, আদালতের রায় ও আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মেঘনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনিডেব (বিডি) লিঃ এর পক্ষে তাহমিনা আক্তার জমির প্রকৃত মালিককে জমির দখল না দিয়ে তার লোকজন দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকী দিচ্ছে। এছাড়াও বাদি আঃ আজিজকে নতুন করে আদালতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি (মামলা নং ৫৬২ ও ৫৬৩) এবং ২০ সেপ্টেম্বর (মামলা নং ৫৭৯) একটিসহ মোট তিনটিমিথ্যা মামলার আসামী করে মেঘনা গ্রুপের
লোকজন। শুধু তা-ই নয়, আইনের হাত থেকে রক্ষা পেতে মেঘনা গ্রুপের লোকজন উল্টো সোনারগাঁ থানায় আঃ আজিজের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন।
এ বিষয়ে তাহমিনা আক্তারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, এ ব্যাপারে মেঘনা গ্রæপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের জিএম (প্রশাসন) কার্তিক চন্দ্র বলেন, ইন্ডাষ্ট্রি ভেঙ্গে দিয়ে যদি সরকার ব্যক্তি মালিকানা জমি ফেরত দিতে চায় তাহলে আমাদের আর কি করার আছে।জমির প্রকৃত মার্লিক মামলার বাদী আঃ আজিজের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি সকল তথ্য সত্য বলে জানান।
উল্লেখ্য,মেঘনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারী খাস জমি, নদী, খালসহ ব্যক্তি মালিকানা জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ভুক্তোভোগী জনগণ অতিব সাধারণ হওয়ায় কোন বিচার পাননি বরং তাদের ন্যায্য অধিকার চাইতে গিয়ে উল্টো হয়েছেন হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার।ফলে আক্ষেপের সাথে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, আগ্রাসী- দখলবাদী মেঘনা গ্রুপ থেকে তাদের বাঁচানোর দীর্ঘশ্বাস কেউ কি শুনবে ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন