সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ- নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দাউদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি ও তার লোকজন (খননযন্ত্র) ড্রেজারের মাধ্যমে কৃষি জমি থেকে বালু তুলে কৃষকের জমি বিনষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ার কারণে তিনি উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নয়ানগর, পরমেশ্বরদী ও চৌরাপাড়া বিল থেকে জোরপূর্বক নিরীহ মানুষের জমি থেকে বালু উত্তোলন করে এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের কৃষি জমির ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি এলাকাবাসীর।
অভিযুক্ত দাউদের দাবি তিনি এ জমি ক্রয় করে বালু উত্তোলন করেন। কারো জমি থেকে তিনি জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করেন না। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য দাউদের কাছ থেকে বালুর প্রতি ফুটে দুই টাকা হারে চাঁদা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা ইউনুস মিয়া ও নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে। তবে যুবলীগ নেতা ইউনুস মিয়া চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের দাউদ মিয়া, রোমান মিয়া গং দীর্ঘদিন ধরে নয়ানগর. চৌরাপাড়া ও পরমেশ্বরদী এলাকায় জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে দাউদ মিয়া একই স্থান থেকে ছোট সোলো মেশিনের মাধ্যমে ড্রেজার তৈরি করে ওই জমির বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে জমিটি গভীর হয়ে পড়ে। জমিটির বালু গভীরভাবে কেটে নেওয়ার কারনে পাশ্ববর্তী জমির মাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাছাড়া দাউদ ও রোমান মিয়া সরকারি খাস সম্পত্তির মাটিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি তাদের জমি রক্ষার্থে একাধিকবার প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। প্রতিবাদ করলেই তারা লোকজন দিয়ে হামলা ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে। বালু উত্তোলনের কারণে দাউদ ও তার লোকজন বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। বৈদ্যুতিক খুটির কাছে ড্রেজার বসিয়ে তারা বালু উত্তোলন করছেন। যেকোন সময় বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। ফলে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
সরেজমিনের ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, নয়ানগর, পরমেশ্বরদী বিলের মাঝে একটি প্রায় আড়াই একর সম্পত্তিতে একটি সেলো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করেছেন দাউদ মিয়া। সেখানে পুকুরের মধ্যে একটি ঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তারা সেলো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছেন।
এলাকাবাসীর দাবি, ৯০ শতাংশ সরকারি জায়গা দখল করে তিনি প্রথমে বালু উত্তোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে সরকারি জমির পাশাপাশি কৃষকের কাছ থেকে ৪৫ শতাংশ জমির মাটি কেটে নেওয়ার কথা বলে সেখানে মাটি কাটতে কাটতে প্রায় আড়াই একর পুকুর করে ফেলে। পাশ্ববর্তী কৃষি জমি ভেঙ্গে গেলে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে সেই জমি থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। বালু উত্তোলনে জমি ভেঙ্গে গেলে বাধ্য হয়েই তাদের কাছে জমি বিক্রি করতে হচ্ছে।
আব্দুর রহমান নামের এক কৃষক জানান, ফসলি জমিতে গভীর ভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে আশপাশের ফসলি জমি ভেঙ্গে যাচ্ছে। বালু উত্তোলনের স্থানের পাশে তাদের সাড়ে ২১০ শতাংশ কৃষি সম্পত্তির রয়েছে। মাটি কেটে নেওয়ার তার প্রায় ৮০শতাংশ জমি ভেঙ্গে সেই পুকুর হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে ওই জমি তাদের কাছে বিক্রি করতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে চকে আর জমি থাকবে না। সবগুলো কৃষি জমি পুকুরে পরিণত হবে।
পরমেশ্বরদী গ্রামের ওহাব আলী নামের এক কৃষক বলেন, দাউদ, ও নোমান গং এলাকার মানুষকে জিম্মি করে তাদের বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা (খনন যন্ত্র) ড্রেজার বসিয়ে বৈদ্যুতিক খুটির কাছ থেকে বালু উত্তোলন করে। ফলে যেকোন সময় বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। তাছাড়া সাংবাদিক ও প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে যুবলীগ নেতা ইউনুস মিয়া ও নাসির উদ্দিন দাউদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করি।
চৌরাপাড়া গ্রামের আবু ইসহাক মিয়া বলেন, দাউদ মিয়া ফসলী জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের জমি ভেঙ্গে পুকুরে চলে যাচ্ছে। তার কাছে জমি বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। বর্ষা মৌসুম থাকায় পানির নিচে কার জমি থেকে তারা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে কোনভাবে বুঝার উপায় নাই।
অভিযুক্ত দাউদ মিয়া জানান, আমি কয়েক বছর ধরে বালু উত্তোলনের ব্যবসা করে থাকি। কারো জমি থেকে বালু উত্তোলন করি না। জমি ক্রয় করে সেই জমি থেকে বালু কেটে বিক্রি করি।
স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের নামে চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত ইউনুস ও নাসিরউদ্দিন অস্বীকার করেছেন।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজওয়ান উল ইসলাম জানান, এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন