সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ-নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার আদমপুর বাজারে সরকারী জমিতে অবৈধভাবে স্থায়ী দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওসমান গণির বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরে এ দোকান নির্মাণ করছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা নাম ভাঙ্গিয়ে “নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান পৌর মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট” নামে একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে তিনি এ দোকান নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণের ফলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সোমবার সকালে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্বারক লিপির মাধ্যমে অভিযোগ জানানো হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সোনারগাঁ পৌর প্রশাসককে স্বারকলিপির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর দায়ের করা স্বারকলিপি থেকে জানা যায়, সোনারগাঁ পৌর এলাকার আদমপুর বাজারে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিদিন সকালে শাক সবজি, ফল মূল ও মাছ পাইকারী ও খুচরা বাজার বসে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এ বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য ক্রয় করে থাকেন। মাছ বাজারে প্রবেশ পথে সরকারী জমি দখল করে রাতের আধারে মুক্তিযোদ্ধা নাম ভাঙিয়ে দোকান নির্মাণ করেন। এতে বাজারে প্রবেশ পথ সরু হয়ে যায়। তাছাড়া পুরুষ ও মহিলা চলাচলে একজনের শরীরের সাথে অন্য জনের ধাক্কাধাক্কি হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতাদের মধ্যে।
এর আগেও মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণি একই বাজারে সরকারী জমি দখল করে তিনটি দোকান নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে তার এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেননি। ফলে তিনি দিন দিন বিভিন্ন স্থানে দখল বানিজ্য করে যাচ্ছেন। সরকারী সম্পত্তি দখল করে নিজের পকেট ভারি করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এসব দোকান নির্মাণ করে ভাড়া হিসেবে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এই মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে আদমপুর বাজারে গিয়ে জানা যায়, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে সনমান্দি প্রধান সড়কের পাশে আদমপুর মাছ বাজারে প্রবেশ পথে দু’চালা টিনের ঘর নির্মাণ করেন। ঘর নির্মাণ স্থানে এর আগে আলাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি আলু পেয়াজ ও সবজি বিক্রি করতেন। জোরপূর্বক ওই স্থানে মুক্তিযোদ্ধার নামে একটি সাইনবোর্ড সাটিয়ে দখল করে নেন।
আদমপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা আলাল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখল হওয়া স্থানে ব্যবসা করে আসছি। রাতের আধারে মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণি হঠ্যাৎ করে একটি সাইনবোর্ড দিয়ে দোকান দখল করেন। সকালে এসে তার দু’চালা একটি ঘর দেখতে পাই।
এলাকাবাসীর সূত্রে জান যায়, মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি এক সময় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকুরি করতেন। এখন তিনি ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে চড়ে বেড়ান। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙিয়ে সরকারী সম্পত্তি দখল করে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত টাকা তিনি একাই ভোগ করেন। এখন তিনি প্রায় কোটি টাকার মালিক। যেখানেই তিনি সরকারী সম্পত্তি পড়ে থাকতে দেখেন সেখানেই মুক্তিযোদ্ধার নামে সাইনবোর্ড সাটিয়ে দখল করে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণির কাছে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক পরিবার কুক্ষিগত। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে তিনি অর্থ নিয়ে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে তার ব্যক্তিগত একটি কিন্ডারগার্টেন গড়ে তুলেছেন। সেখান থেকে আসা আয় তিনি নিজে ভোগ করেন। তার বাড়ি সরকারী খালের ওপর নির্মিত। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকারী সম্পত্তি দখলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অর্পিত সম্পতিতে আদমপুর বাজারে সকল দোকান গড়ে উঠেছে। জমি লিজ পাওয়া জন্য আবেদন করেছি। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি ইউএনওর কাছে আবেদন না করে ডিসির কাছে করতে উল্টো পরামর্শ দিয়ে রাগান্বিত হয়ে উঠেন।
সোনারগাঁ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশরেকুল আলম জানান, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে দৈনিক বাজার থেকে খাজনা তুলতে ইজারা দিয়েছি। স্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণের কোনভাবেই সুযোগ নেই। তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ দোকান নির্মাণ করেছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ওসমাণ গণি নামের এক ব্যক্তির নামে এলাকাবাসী দোকান নির্মাণের অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আইনগত ভাবে দেখভালের জন্য এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারী সম্পত্তি অবৈধভাবে কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন