স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ :রাত পোহালেই কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচন এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য পৌর যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক ও পৌর বিএনপির বহিস্কৃত সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বাশার বাদশা। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করা প্রার্থী আবুল বাশার বাদশা শুধু বিএনপির বহিস্কৃত নেতা তা নয় তার বাবা আব্দুল গাফফার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য।শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাকে আওয়ামীলীগের একাংশের সমর্থিত প্রার্থী করায় কাঞ্চন আওয়ামীলীগের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাদশার বাবা দেওয়ান আবদুল গাফফার ছিলো স্বাধীনতার সময়ের শান্তি কমিটির সদস্য। সে তৎকালীন সময়ের এমএলএ নির্বাচন করে ফেল করেন। ছোটকাল থেকেই বাদশার সঙ্গী ছিলো গাঁজা আর মদ। ৯০-৯১’ সালে দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো। ৯১’ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ৯৩’ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত মতিন চৌধুরির হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেয়। চলতি বছরের কয়েক মাস আগে আবার ভোট পাল্টে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ৮৭’ সালে তিনি কাঞ্চন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হন। ২০১৪ সালে কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র হন। কিন্তু এ দুই সময়ে ক্ষমতায় থেকেও কোন উন্নয়নমূলক কাজ না করার কারণে তার থেকে কাঞ্চনবাসী মুখ ফিরিয়ে নেন।
বাদশার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বাদশা সারাদিন মদপানে মশগুল থাকে। মদ তার জীবন সঙ্গী। মদে মশগুল থাকায় তার মেয়েকে তার মেয়ের জামাতা ডির্ভোস দিয়ে চলে চলে গেছে। পরপর দুই সংসার নষ্ট হয় মেয়ের। সূত্রটি আরো জানায়, বাদশা মেয়র হলে তাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। তার দপ্তর চালাবে তার কতিপয় বাহিনীর লোকজন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেওয়ান বাদশার সব কিছু দেখভাল করেন দেওয়ান মুকুল ও আলাউদ্দিন মাস্টার। তাঁদের সঙ্গে আরো রয়েছেন স্থানীয় পলাশ মিয়া, তুষার দেওয়ান, কমর উদ্দিন, হাসমত আলী, ভাগ্নে মিলন, আজগর আলী, পন্ডিত, কমরউদ্দিন, জসিম মিয়া, খালাতো ভাই সুজাউদ্দিন, দেওয়ান বাবুল ও মাহফুজ মিয়া।
গত ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বরের কথা। আদালত বসেছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভায়। ফরিয়াদি ছিলেন হাজি আবু ছাঈদ, বিবাদী ছিলেন মিয়াজউদ্দিন। কাঞ্চন মৌজার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল তাঁদের মধ্যে। এভাবে শুধু জমিজমা না, নিজের আদালতে আরো নানা ধরনের বিবাদের ফয়সালা করতেন তৎকালীন মেয়র দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা। তখন স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছিলেন 'মেয়রের আদালত'। বেআইনিভাবে এই 'আদালত' চালিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ফৌজদারি, দেওয়ানিসহ সব ধরনের অভিযোগের 'নিষ্পত্তি' করা হতো। অভিযোগ ছিলো, যে পক্ষ বেশি টাকা দিতে পারতো, তাদের পক্ষেই রায় দেওয়া হতো। কেরাব এলাকার কৃষক আবদুল আলী জানান, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তাঁকে ঐ সময় মেয়র বাদশার আদালতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু না যাওয়ায় তাঁকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। দুই দিন পৌর কার্যালয়ে আটকেও রাখা হয়েছিল। আবদুল আলী বলেন, 'বাজান আমার কোনো অপরাধ আছিল না। হেয় (মেয়র) আমারে নোটিশ কইরা ডাকছিল। হের ডাহে যাই নাই ক্যান, হের লেইগ্যা দুই লাক টেকা জরিমানা করছে। আর দুই দিন হের অফিসো আটকাইয়া রাখছে। পরে টেকা দিলে ছাইড়া দেয়। এসব ঘটনা সে মেয়র থাকাকালীন সময়ের। এমন আরো অনেকে বাদশার আমলে তার আদালতে ভোগান্তির শিকার হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার বলেন, কাঞ্চন পৌরসভার দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রকাশ্যে দেওয়ান বাদশার পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এদের একজন তার বাগানবাড়ি করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করেছিলো। এর বিরোধিতা করেছিলেন মেয়র রফিক। এ কারণে তিনি বাদশার পক্ষ নিয়েছেন। আরেকজন ইউএস বাংলার উল্টো পাশের সাধারণ মানুষের জমি দখলে করেছেন। মেয়র রফিক এটার বিরোধিতা করায় ঐ ব্যক্তি বাদশার পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় ভোটাররা বলেন, বাদশা যখন মেয়র ছিলো কাঞ্চনে কোন উন্নয়ন হয়নি। ওনি সারাদিন মদ খেয়ে পড়ে থাকতো। কাঞ্চনবাসীর বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতো না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ওর বাবা ছিলো শান্তি কমিটির সদস্য।
বাদশার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে সংবাদকর্মী শুনবার পর ব্যস্ত বলে মুঠোফোন কেটে দেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন