নিজস্ব প্রতিনিধিঃ-নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে বাদীকে না জানিয়ে একটি মামলায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে আসামী করে দেয়া হয়েছে শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করা দেশের প্রাচীনতম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’র সংগঠকদের। শুধু তাই নয় উপজেলা খেলাঘরের ৩ সংগঠক, সংবাদ কর্মী এমনকি গাইনি চিকিৎসক ও হাসপাতালের ম্যানেজারসহ ২ শতাধীক ব্যক্তিকে করা হয়েছে আসামী।
অথচ অন্য থানা এলাকায় ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে সোনারগাঁয়ে ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে মামলাতে। তাছাড়া মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন ১২ জনের বিরুদ্ধে । কিন্তু সেই মামলায় তার অজান্তেই আসামী হয়ে গেছে ২ শতাধিক। ।
সোনারগাঁ থানায় করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পন্ড করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাচঁপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গত ২০ জুলাই বিকেলে ছাত্র জনতার উপর গুলি করে। এসময় সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের লাদুরচর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে রুহুল আমিন পায়ে গুলিবিদ্ধ হলে স্বজনেরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁ থানায় মামলা করেন তিনি। যার মামলা নং-১০। এই মামলায় আসামী করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, সজিব ওয়াজেদ জয়, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী নেতা কর্মীদের। মামলায় ১৭৯ জনের নাম উল্লেখ এবং ৬০ জন অজ্ঞাতসহ আসামী করা হয় ২৩৯ জনকে। এই মামলায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে আসামী করা হয়েছে শিশু কিশোরদের নিয়ে কাজ করা দেশের প্রাচীনতম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর সোনারগাঁ উপজেলার ৩ সংগঠককে। যাদের মধ্যে রয়েছেন ‘খেলাঘর’ সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক লায়ন রাজা রহমান, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক নুর নবী জনি এবং সম্পাদক মন্ডলির সদস্য ‘সুপ্তি খেলাঘর আসরে’র সভাপতি ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক সঙ্গীত শিল্পী আনোয়ার হোসেন। এছাড়াও স্থানীয় ২ সাংবাদিক (হাবিবুর রহমান, নাছির উদ্দিন) এমনকি ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ নাসরীন হক, সেবা হাসপাতালের ম্যানেজার ও সোনারগাঁ কৃষক দলের সহসাধারণ সম্পাদক আক্তার, মার্কেটিং অফিসারসহ আরো অনেককে জড়ানো হয়েছে এই মামলায়। এদিকে সামাজিক সাংষ্কৃতিক ব্যক্তি, ডাক্তার ও সাংবাদিকদের নামে মামলা দেয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং মামলায় এতো আসামীর নামও দেননি দাবী করে বাদী রুহুল আমিন জানান, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মাদানী নগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠে মাদানী নগর মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলেকে খুঁজতে চিটাগাং রোডের ডাচ বাংলা ব্যাংকের (মেইন রোডের সাথে একটি মার্কেটের দোতলায় অবস্থিত) সামনে গেলে হঠাৎ করে গুলি এসে আমার ডান পায়ে লাগে। কে বা কারা গুলি করছে তা দেখি নাই। পরে মেয়ের জামাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি বিএনপির একজন কর্মী। হাসপাতাল থেকে ফিরলে আমার বাসায় এসে মামলার কাগজে সই নেয় সোনারগাঁয়ের বিএনপির কয়েকজন নেতা। মামলায় শেখ হাসিনা, রেহেনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৯ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাইনবোর্ড এলাকার ৩ জন মিলিয়ে ১২ জনের নামে আমি অভিযোগ দিছি। এর বাইরে কত বেশি আসামী সেইটা আমি জানিনা। এতো আসামী আমি করি নাই। তারা (নেতারা) মনে হয় কিছু নাম দিছে।
গোলাগুলির ঘটনা সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় হলেও সোনারগাঁ থানায় মামলা কেন করলেন জানতে চাইলে বলেন, বিভিন্ন কথা বুঝাইয়া শিখাইয়া নেতারা আমার সই নিছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা খেলাঘরের সভাপতি জহিরুল ইসলাম নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, খেলাঘর সবসময় শিশু-কিশোরদের পাশে থেকে কাজ করে। আন্দোলন সংগ্রামে নিহত শিশু-কিশোরদের পক্ষে আমাদের সংগঠকরা প্রতিবাদ করেছে। আক্রোশ বশত আমাদের সংগঠকদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। মামলা থেকে খেলাঘর সংগঠকদের নাম প্রত্যাহার দাবী করছি।
সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ এম এ বারী জানান, এইসব মামলার বিষয়ে উপর থেকে তদন্ত হবে। আমরাও তদন্ত করবো। তবে নিরাপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবেনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন